click here

Editors Choice

3/recent/post-list

Search This Blog

রূপগঞ্জের গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাট ও আগুন, নিখোঁজ ১৮৭


 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার রাত ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সর্বশেষ গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৮৭ জন নিখোঁজ থাকার তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিখোঁজদের কেউ গাজী গ্রুপের কর্মী নয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গতকাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভানোর চেষ্টা চলছে। কারখানাটিতে প্রচুর টায়ার, টায়ার তৈরির কাঁচামাল ও প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য থাকায় আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ২০ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি কারখানার আগুন।

জানা গেছে, আগুন লাগার পর শত শত মানুষ গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে মেশিনপত্র ও আসবাবপত্র ও উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে লুটপাট চালাতে গিয়ে ৪-৫ শতাধিক মানুষ ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে উঠে পড়েন। সেখান থেকেও লুটপাট শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে ভবনের নিচতলায় দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ছয়তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভেতরে আটকে পড়া অনেকেই আর বের হতে পারেননি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ১২টি ইউনিট কাজ করে। রাজধানীর সিদ্দিকবাজার থেকে টিটিএল মেশিন এনে কারখানার ওপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ছয়তলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভানো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভেতরে কি পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছিলেন তা কেউ বলতে পারেনি।

যেভাবে আগুনের সূত্রপাত : গাজী গ্রুপের মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। রোববার ভোররাতে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার হন তিনি। গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, তাকে (গাজী) গ্রেফতারের পরপরই রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে ২০০ থেকে ২৫০ জনের একটি দল কারখানার ভেতরে ঢুকে শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে গেট আটকে দেয়। এরপরই লুটপাট শুরু করে। যে যার মতো জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি আরো বলেন, টায়ার তৈরির জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল, কাঁচামালসহ প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার মালামাল ছিল ভবনটিতে। লুটপাট শেষে রাত ৯টার দিকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় লুটপাটকারী কয়েকজন আটকা পড়ে ভবনের ভেতরে। পরে তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, এবারই প্রথম না, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ৫ আগস্টও লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তখন কারখানাটির ৫ থেকে ৬টা শেড পুরোপুরি পুড়ে যায়। এখন আমরা ভবনটির ভেতরে কাজ করছিলাম। সেটাও পুড়িয়ে দিয়েছে। মূলত প্রতিপক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য এ জমি দখল করা।

কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, রোববার বিকেল থেকে কয়েকশ’ লোক কারখানার ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। লুটপাট শেষে রাতে একাধিক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে এলেও তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি সারা রাতেও। লুটপাট ঠেকাতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থ ও কাঁচামালের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। রোববার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে স্থানীয়দের মাধ্যমে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস। ঢাকা ফুলবাড়িয়া ফায়ার স্টেশন, ডেমরা, কাঁচপুর, আদমজী ইপিজেড ও কাঞ্চন ফায়ার স্টেশন থেকে একে একে যোগ দেয় ১২টি ইউনিট। অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে থেমে থেমে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এতে আশপাশের এলাকায় শিল্প কারখানা ও বাড়িঘরের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করছে।

আগুন লাগা ভবনটির ভেতরে ৩ থেকে ৪শ’র মতো লোক আটকা পড়ে আছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন। তারা জানান, রোববার বিকেল ৩টার দিকে প্রায় এক হাজার থেকে ১২শ’র মতো লোক লুটপাটের জন্য গাজী টায়ারের ওই কারখানায় ঢুকে ভাঙচুর করতে থাকেন। এরপর রাত ১০টার দিকে লুটপাটের সময় আগুনের সূত্রপাত হয়।
এ দিকে আগুনে আটকে পড়া নিখোঁজ লোকদের পরিবার-পরিজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে কারখানা এলাকা। এ সময় তাদের দাবির ভিত্তিতে নিখোঁজের তালিকা শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। কারখানার গেটে নিখোঁজদের খুঁজতে আসা স্বজনরা জানান, গত রোববার গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা কারখানায় ছুটে আসেন। এরপর তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি। নিখোঁজদের মধ্যে মুড়াপাড়া দরিকান্দী গ্রামের মামুন, জহিরুল, জাকির হেসেন, স্বাধীন, ইব্রাহিম, তারাবো পৌরসভার বরপা গ্রামের স্বপন, আসাদ, সোহাগ, আবু সাঈদ, মানিক, রতন, বকুল, জিন্নাত, মৈকুলী গ্রামের রাজ, ছাব্বির, ফয়েজ, সুজন। তাদের বয়স ১৫ বছর থেকে ৪০ বছর। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক রেজাউল করিম (প্রশিক্ষণ) বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এই মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে কতক্ষণ লাগবে, এটা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছুই ধারণা করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিখোঁজের প্রাথমিক এই তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা করার পর তা পুলিশকে দেয়া হবে। পুলিশ তদন্ত করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য জানাবে। এ ঘটনায় কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
খবর পেয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আহসান মাহমুদ রাসেল, বাংলাদেশ সেনাবহিনীর একটি প্রতিনিধিদল, বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান হাবিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

রূপগঞ্জের ইউএনও আহসান মাহমুদ বলেন, আগুন লাগানো ও লুটপাটের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নেবে। নতুন করে কেউ যেন লুটপাটে না জড়ায়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক আছেন।
 

Post a Comment

0 Comments